ভাবুন তো কোন দেশের মানুষ বেশিদিন বাচেঁ? অবশ্যই আপনার জাপানের নাম মনে আসছে তাই না? বিশ্বে জাপানের মানুষ দীর্ঘায়ূ হয় এর কারন হল জাপানিদের কঠোর পরিশ্রমি জীবন যাপন এবং সুশৃঙ্খল পরিমিত খাদ্যাভ্যাস। তারা যেমন শারিরিক ভাবে পরিশ্রমী তেমনই পরিমিত খাদ্য গ্রহনেও তারা অভ্যস্ত। জাতি হিসাবে জাপানিরা অনেক সফল আর এর নানাবিধ কারনের মধ্যে সর্ব প্রথম হল নিয়ম তান্ত্রিক জীবন যাপন। আপনি জাপানে মোটা মানুষ দেখবেন না খুব একটা, তার মানে কি তারা সকলেই ডায়েটিং করে? আসলে তাদের প্রাত্যাহিক খাদ্যাভ্যাসই হলো প্রচুর পুষ্টি উপাদানে ভরপুর খাদ্য অল্প পরিমানে আহার করা। আর তারা তাদের প্রাত্যহিক চলাফেরায় অনেক কিছু এমন ভাবে পালন করে যাতে করে তাদের আর আলাদা ভাবে ব্যায়াম করতে হয়না। যেমন, অল্প দূরত্বের পথ তারা হেটে অতিক্রম করে, মোটর চালিত যান থেকে তারা সাইকেল বেশী পছন্দ করে। এই অভ্যাস গুলো তাদের শারীরিক ভাবে আরো সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
আমাদের সকলের মনে ডায়েট এর প্রথাগত ধারনা হলো না খেয়ে মেদ কমানো যা একান্ত ভুল একটি ধারনা। আপনি যদি আসলেই আপনার ওজন ও মেদ কমাতে চান তবে আপনাকে পরিমিত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন ও নিয়ম করে শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। নিচে জাপানিদের ডায়েট তালিকার সাধারন কিছু খাবার উল্লেখ করা হলো যা থেকে আপনি খুব ভাল ভাবেই বুঝতে পারবেন কেন জাপানিরা সবাই দীর্ঘায়ূর ও সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়।
জাপানিদের সাধারন কিছু খাবার
ভাত
আমাদের মত জাপানিরাও ভাত খেতে ভালোবাসে। ভাত হচ্ছে জাপানিদের নিয়মিত খাবার। তবে তারা সাধারণত বাদামি চালের ভাত খেতে পছন্দ করে। এটি উচ্চ
ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ যা হার্ট ভাল রাখতে সহায়তা করে। আরো নানাবিধ কারনে যেমন ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ, রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন, শরীরে সঠিক প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেড সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় শক্তি যোগানে বিশেষ ভাবে কার্যকর এই বাদামি চাল।
নুডুলস
যদিও জাপানিরা প্রক্রিয়াজাত খাবার খুব কম খায়, তবে নুডুলস জাপানিদের খাদ্য তালিকায় অতি সাধারণ একটি খাবার। জাপানিরা সাধারনত স্বাস্থ্যকর গম থেকে তৈরি নিম্ন কার্বোহাইড্রেড সমৃদ্ধ নুডুলস খেয়ে থাকে।
ফলমুল
সাধারণত সব ধরনের ফল মূল শরীর ও স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সহায়তা করে। তবে ফুজি আপেল জাপানিদের প্রিয় ফল। তারা তাদের অঞ্চলের পেরসিমন ও মান্দারিন নামের বিশেষ ধরনের কমলা ও খেতে পছন্দ করে যা স্বাদে অনন্য।
মাছ
অঞ্চল ভেদে মাছের প্রপ্যতা ভিন্ন রকম। তবে জাপানিদের প্রিয় মাছ হলো ম্যাকেরেল ও স্যালমন। তাদের খাদ্য তালিকায় এই মাছগুলো বেশি প্রাধান্য পায় কারণ এতে প্রচুর পরিমানে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগ্নেসিয়াম, ভিটামিন এ, ডি, সি, বি-৬, বি-১২ আছে ও ফ্যাট একেবারে নেই বললেই চলে।
আরও পড়ুনঃ খালি পেটে পানি পান করার উপকারিতা
শাকসবজি
জাপানিরা প্রায় সকল ধরনের শাক সবজি বিশেষ করে বেগুন, শিম, মাশরুম, বাঁধাকপি, মিষ্টি কুমড়া, আলু, কচি বাশের কেরুল, মুলা, গাজর ও বিভিন্ন সামুদ্রিক শৈবাল খেতে পছন্দ করে। পাশাপাশি তারা বিভিন্ন বীজ জাতীয় খাবার যেমন সয়াবিন, খাবার উপযোগী বিভিন্ন ঘাসের বীজ, বিকল্প দুগ্ধ জাতীয় খাবার হিসাবে সয়া মিল্ক থেকে তৈরি টফু খেয়ে থাকে যা অনেক স্বাস্থ্যকর ও এন্টি অক্সিডেন্ট এ ভরপুর।
উপরোক্ত সকল ডায়েট তালিকার খাবারের সাথে জাপানিদের সব সময়কার অতী গুরুত্বপূর্ন পানিয় হচ্ছে চা এবং তা অবশ্যই গ্রিন টি যা অল্প মাত্রায় ক্যাফেইন এবং অধিক মাত্রায় পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড নামের দুটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
জাপানিদের খাবারের ডায়েট তালিকা
আমাদের দেশের সাথে জাপানিদের খাবারের অনেক পার্থক্য বিদ্যমান যেমন তারা কাঁচা মাছ খায় যা আমাদের পক্ষে খাওয়া সম্ভব নয় এবং তা একেবারেই আমাদের খাদ্যাভ্যাসের বিপরীত। আরো একটি সমস্যা হলো অনেক ধরনের খাবার তারা খায় যা আমাদের দেশে যোগার করা কষ্টসাধ্য। তবে পুষ্টি উপাদান এর সাথে মিলিয়ে আমরা তাদের ডায়েটের সাথে আমাদের খাবার তালিকা তৈরি করে নিতে পারি খুব সহজেই যা আমাদেরকে জাপানিদের মতো সুন্দর স্বাস্থ্য ও আমাদের দেহ্কে দীর্ঘদিন বেচে থাকার রসদ যোগাতে সহায়তা করবে। নিম্নে তিন বেলার জাপানি ডায়েট খাবারের তালিকা দেয়া হলো এবং কিছু খাবার যা আমাদের খাবারের তালিকায় রাখা সম্ভব না তা পুষ্টি উপাদানের সাথে মিল রেখে উপস্থাপন করা হলো।
সকালের নাস্তা
জাপানিদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন খাবারের সময় হলো সকালের নাস্তা। তারা প্রতিদিন সকালের নাস্তাকে খুব প্রাধন্য দেয়। সাধারনত তারা সকালে মিশো সুপ, একটি মান্দারিন আর এক কাপ গ্রিন টি পান করে। বিশেষ করে তারা সকালে মিশো সুপ খায় কারন এটা কম চর্বিযুক্ত। এখানে আপনি তিনটি লাল আটার রুটি খেতে পারেন শাক সবজি দিয়ে।
আরও পড়ুনঃ তিন দিনে চার কেজি ওজন কমানোর উপায়
দূপুরের খাবার
জাপানি লোকেরা দূপুরে এক বাটি সুসি সয়া সস দিয়ে খায় যা কাঁচা মাছ দিয়ে তৈরি। সাথে মাশরুম দিয়ে এক বাটি নুডুলস ও একটি আপচ। আর সকালের মতই এক কাপ গ্রিন টি। বর্তমান সময়ে মাশরুম আমাদের দেশেও সহজলভ্য এবং তা অনেক সুস্বাদুও বটে তবে আমরা এখানে সুসি এর পরিবর্তে অল্প ভাত এক টুকরো মাছের সাথে খেতে পারি।
রাতের খাবার
জাপানিদের রাতের খাবার তালিকায় থাকে এক বাটি ভাত, একটি কমলা ও সসিমি যা বিভিন্ন মাছের সমন্নয়ে তৈরি একটি ঐতিহ্যবাহি জাপানি খাবার। আর প্রতিবেলা খাবারের পর তারা এক কাপ গ্রিন টি পান করতে পছন্দ করে । এখানে লক্ষণীয় যে জাপানিরাও আমাদের মত মাছ অনেক পছন্দ কনী। জাপানি ডায়েট খাবার তালিকার রাতের খাবারের সসিমির পরিবর্তে আমরা মাছের তরকারি ব্যবহার করতে পারি অনায়াসে।
উপরের সকল বিষয় পর্যালোচনা করলে পরিশেষে এটাই প্রতিয়মান হয় যে সুস্থ্য থাকতে দরকার পরিমিত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন। আমাদের জন্য জাপানিদের খাদ্যাভ্যাসে অনুকরণীয় হলো খাবার না খেয়ে স্বাস্থ্য ঠিক রাখা বা ওজন কমানো নয় বরং পুষ্টিকর খাদ্য অল্প পরিমানে খেয়ে ও জীবন ধারায় পরিবর্তন এনে তাদের মত দীর্ঘায়ূ লাভকরা। এবং আমাদেরকে তাদের জীবনধারাও অনুকরণ করতে হবে যেমন তাদের প্রাত্যাহিক অভ্যাস গুলো আয়ত্তে আনা। নিয়ম করে হাটা, সাইকেল চালনা, মেডিটেশান করা ও ছোটোখাটো সকল জিনিস উপভোগ করা।