শিশুর দাঁতের যত্ন ও মাড়ির যত্ন নিতে যা করবেন

শিশুদের দাঁত ও মাড়ির যত্নে অবহেলার কারণে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। আপনার ছোট্ট শিশুটির দাঁত উঠার আগে ও পরে চাই যত্ন ও পরিচর্যা। আমাদের দেশের শিশুরা প্রায়ই দাঁত ও মাড়ির সমস্যায় ভোগে অথচ শিশুর দাঁতের যত্ন প্রাত্যহিক যত্নের মধ্যে পরে যার অভ্যাস শিশুদের খুব ছোটবেলা থেকেই শেখানো বা শিখিয়ে গড়ে তোলা প্রয়োজন। শিশুদের দাঁতের যত্ন নিতে হয় শুরু থেকেই কারন গর্ভেই শিশুর দাঁত উঠা শুরু করে আর সাধারনত তা ছয় মাস বয়সে দৃষ্টিগোচর হয় । কোমলমতি শিশুদের দাঁতের যত্ন নেওয়া শেখাতে পিতা মাতার ভূমিকাই প্রথম এবং যা তাদের অন্য সকল শিক্ষার সাথে ছোট কালেই শেখানো খুব প্রয়োজন।

দাঁত উঠার প্রারম্ভে করণীয়

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর শেষে পাতলা সুতি কাপড় অথবা তুলা দিয়ে মাড়ির ওপর থেকে দুধের আবরণ পরিষ্কার করে দিন আর খেয়াল রাখবেন তা যেন অবশ্যই পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত হয়। দাঁত উঠার আগে শিশু যা কিছু সামনে পায় সেটাই কামড়াতে চায়, তখন তাকে বেবি টিথার দিতে হবে যা কামড়ানোর ফলে তার দাঁতের গঠন শক্ত হবে। এই সময় শিশুর হাতের কাছ থেকে বিষাক্ত, ধারালো, নোংরা জিনিস বা ওষুধপত্র দূরে রাখুন আর এমন কিছু দেবেন না যা গিলে ফেললে তার গলায় আটকে যেতে পারে।

দাঁত উঠার পরে করণীয়

দাঁত উঠলে শিশুকে শুরুতেই দাঁত ব্রাশ করা শেখাতে হবে। শিশুকাল থেকেই দাঁত ব্রাশের অভ্যাস গড়ে তুলতে শিশুর বাবা মা তার সামনে ব্রাশ করলে তার আগ্রহ অনেক বাড়ে আর অনুকরণ প্রিয় হওয়ার কারনে তারা খুব জলদি শেখে। তাই দাঁত ওঠার শুরুতেই আপনার শিশুর হাতে কমল ও নরম একটা ব্রাশ তুলে দিন। অবশ্যই তার জন্য বেবি জেল বা পেষ্ট ব্যবহার করবেন কারন তা গিলে ফেললেও সমস্যা নেই আর বড় হওয়ার সাথে সাথে তাকে সঠিক পদ্ধতিতে ব্রাশ করা শেখান।

শিশুর দুধ দাঁতের যত্ন

শিশুর দুধ দাঁত গুলোর যত্নে আপনার আরো বেশি খেয়াল রাখা দরকার কারণ দুধদাঁত গুলো সাধারনত সাত থেকে এগারো বছর বয়স পর্যন্ত ধীরে ধীরে পড়ে গিয়ে আবার নতুন করে স্থায়ী ভাবে জন্মায়। শিশুদের পরবর্তী স্থায়ী দাঁতগুলোতে যেন কোন সমস্যা না হয় সেজন্য তার দুধদাঁত গুলোর যত্ন নেয়া অনেক গুরুত্বপুর্ন। অযত্ন ও অবহেলার কারনে দুধ দাঁতের শিকড়ে প্রদাহ অনেক দিন স্থায়ী থাকলে স্থায়ী দাঁতের ক্ষতি হয়। এমন অনেক কারনেই স্থায়ী দাঁতগুলো আঁকাবাঁকা বা অসমানভাবে বেড়ে উঠে। এই জন্য দুধদাঁত পড়া ও স্থায়ী দাঁত ওঠার সময়ে শিশুর দাঁতের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।

শিশুর দাঁতের যত্নে কিছু টিপস

  • শিশু মিষ্টি খাবার খাওার পর ভালো ভাবে তার মুখ পরিষ্কার করে দিন।
  • দাঁত উঠার আগে থেকেই নবজাতক শিশুর মুখ ও মাড়ি পরিষ্কার রাখা উচিত।
  • বুকের দুধ খাওয়ানো শেষ হলে পাতলা ফ্লানেলের কাপড় অথবা তুলা দিয়ে দাঁতের ওপর থেকে দুধের আবরণ পরিষ্কার করে দিন।
  • শিশুর সুস্থ্য দাঁতের বিকাশের জন্য যথা সম্ভব ফিডার না খাওানো, এতে করে নতুন দুধদাঁতেও ক্যারিজ বা ক্ষয় হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
  • শিশুকে নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর এবং রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে দাঁত ব্রাশ করা সেখান এবং তা খাবার গ্রহনের পর।
  • শিশু ঠিকমতো দাঁত ব্রাশ করছে কি না তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
  • শিশুকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় ব্রাশ কিনে দিন যাতে তার দাঁত ব্রাশ করার আগ্রহ বাড়ে।
  • অবশ্যই দুই বা তিন মাসের বেশি এক ব্রাশ ব্যবহার করতে দিবেন না।
  • প্রতিদিন মাউথ ওয়াস এবং ফ্লসিং করা ছোট বেলা থেকেই শেখাবেন।
  • শিশুর মুখে দূর্গন্ধ হলে বা দাঁতে কালো দাগ দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কথায় আছে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা থাকেনা। আশা করি এমনটি আপনার শিশুর বেলায় না ঘটুক তাই তার দাঁতের যত্ন নিন একেবারেই শুরু থেকে। আর বছরে অন্তত দুই বার আপনার ডেন্টিস্ট এর কাছে যান আপনার শিশুর দাঁতের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য।

Leave a Comment