সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে থাকা প্রাচীন জমিদারদের স্মৃতির সাক্ষী জমিদার বাড়ি দেখে একদিকে যেমন জমিদারদের শৌর্যবীর্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় অন্যদিকে ঐতিহ্যের অতল থেকে ঘুরে আসা যায় নিমিশেই। অতীতে সমস্ত জমিদার বাড়িই ছিল কম বেশী জাঁকজমক পূর্ণ কিন্তু বর্তমানে সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে জমিদার বাড়িগুলোর সেই লাবণ্য আর নেই। আজ আমরা জানবো বর্তমান সময়েও জমিদারী আমলের সৌন্দর্য্য ধরে রাখা ১০টি দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়ি সম্পর্কে। ইতিহাসের পাতায় এই দুর্দান্ত ভ্রমণে আপনাকে স্বাগতম।
১। মহেরা জমিদার বাড়ি
স্পেনের করডোভা নগরীর অনুকরণে তৈরী টাঙ্গাইলের মহেরা জমিদার বাড়ি ১৮৮০ দশকের দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়। সুন্দর ও স্বযত্নে সংরক্ষিত এই জমিদার বাড়িতে রয়েছে বেশ কিছু লজ, কাছারিঘর, নায়েব সাহেবের ঘর, গোমস্তাদের ঘর এবং কয়েকটি পুকুর। রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী হওয়ায় মহেরা জমিদার বাড়িটি ভ্রমণ প্রেমী মানুষের কাছে অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। মহেরা জমিদার বাড়িতে ভ্রমণের আরো বিস্তারিত তথ্যের জন্য পড়ে দেখতে পারেনঃ মহেরা জমিদার বাড়ি ভ্রমণ গাইড।
২। বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
উনিশ শতকে নির্মিত বালিয়াটি জমিদার বাড়ি ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। অনন্য নির্মাণশৈলী এবং কারুকার্য সম্পন্ন জমিদার বাড়িটি বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ কতৃক রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। বালিয়াটি জমিদার বাড়ি ভ্রমণ সংক্রান্ত আরো তথ্য বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ বালিয়াটি জমিদার বাড়ি ভ্রমণ গাইড।
৩। উত্তরা গণভবন
নাটোর জেলার দিঘাপতিয়া রাজবাড়িই বর্তমানে উত্তরা গণভবন নামে পরিচিত। ছোট বড় ১২ টি ভবন সমৃদ্ধ এই রাজবাড়ি চারদিক থেকে লেক এবং প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। বর্তমানে উত্তরা গণভবন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গস্থ স্থানীয় কার্যালয় ও বাসভবন হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
৪। ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি বা নওয়াব প্যালেস
চাকচিক্য এবং নান্দনিক টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি বা নওয়াব প্যালেস বর্তমানেও তার ঐতিহ্য ধরে রেখে চলেছে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র ঐতিহাসিক স্থাপনা যা বর্তমানে রিসোর্ট হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এখানে আগত অথিতিরা নবাবদের তৈজসপত্র ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে থাকেন। ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সকল তথ্যের জন্য ঘুরে আসতে পারেন ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি বা ধনবাড়ি নবাব মঞ্জিল ভ্রমণ গাইড থেকে।
৫। শশী লজ
বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মহারাজা শশীকান্ত আচার্যের শশী লজ বাড়িটি ময়মনসিংহের রাজবাড়ী হিসাবেও সমানভাবে পরিচিত। ঊনবিংশ শতকের শেষকালে নির্মিত এই শশী লজের নির্মাণ এবং মার্বেল পাথরের ব্যবহার বেশ আকর্ষণীয়। বর্তমানে শশী লজ মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শশী লজ ভ্রমণ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য জানতে ভিজিট করুনঃ শশী লজ ভ্রমণ গাইড।
৬। তাজহাট জমিদার বাড়ি
রংপুরের তাজহাট গ্রামে অবস্থিত তাজহাট জমিদার বাড়ি দেখতে অনেকটা ঢাকার আহসান মঞ্জিলের মত। কিন্তু এর কারুকার্য এবং মার্বেল পাথরের ব্যবহার এই জমিদার বাড়িকে দিয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই তাজহাট রাজবাড়িতে বর্তমানে রংপুর জাদুঘর পরিচালিত হচ্ছে। তাজহাট জমিদার বাড়ির বিস্তারিত তথ্য এবং ভ্রমণ প্ল্যানের জন্য ভিজিট করুনঃ তাজহাট জমিদার বাড়ি।
৭। মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি
১৮ শতকের শেষভাগে নির্মিত নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত মুড়াপাড়া জমিদার বাড়িটি প্রায় ৬২ বিঘা ভূমি জুড়ে বিস্তৃত। জমিদার বাড়িতে রয়েছে নাচঘর, আস্তাবল, মন্দির, ভাণ্ডার এবং কাচারি ঘর। সর্বমোট ৯৫ টি কক্ষ সমৃদ্ধ দ্বিতল এই জমিদার বাড়িতে বর্তমানে মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
৮। শিতলাই জমিদার বাড়ি
১৯ শতকের শুরুর দিকে পাবনার রাঘবপুরে ১৫ একর জায়গা জুড়ে ইন্দো-ইউরোপিয়ান স্থাপত্যশৈলীতে শিতলাই জমিদার বাড়ি নির্মাণ করা হয়। ৩০টি কক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল এই জমিদার বাড়িতে বর্তমানে ইজারা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে EDRUC নামে একটি ড্রাগ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরি।
৯। পুঠিয়া রাজবাড়ী
চতুর্দিকে পরিখা পরিবেষ্টিত পুটিয়া রাজবাড়ি ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য কৌশলে নির্মিত। বর্তমানে জমিদারদের অন্য শরীকদের কোন স্থাপনা দৃশ্যমান না থাকলেও পুঠিয়া রাজবাড়ী এবং বেশ কিছু মন্দির এখনো তাদের সৌন্দর্য্য ধরে রেখেছে। ১৯ শতকে নির্মিত এই রাজবাড়ীতে বর্তমানে লস্করপুর ডিগ্রী কলেজ পরিচালনা করা হচ্ছে।
১০। বড় সরদার বাড়ি
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে অবস্থিত প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক বড় সরদার বাড়িটি ঈশা খাঁর জমিদার বাড়ি হিসাবেও সুপরিচিত। প্রায় ২৭ হাজার ৪০০ বর্গফুট আয়তনের দ্বিতল বড় সরদার বাড়িতে মোট ৮৫টি কক্ষ রয়েছে। নিপুন নকশা, টাইলস এবং মার্বেল পাথরের ব্যবহার এই জমিদার বাড়িকে করেছে অনন্য বৈশিষ্টে অতুলনীয়।
ঐতিহ্যের নিদর্শন জমিদার বাড়ি শুধু আমাদের ইতিহাসের সাথে পরিচয় ঘটায় না সেই সাথে আমাদের কৃষ্ঠি ও সাংস্কৃতিক জীবন বোধের ধারাবাহিক রূপরেখা প্রদান করে। সময়ের পালাবদলে আজ জমিদারি ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়েছে কিন্তু চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন আপনার পছন্দের জমিদার বাড়ি থেকে। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে আপনার কাটানো সময় ব্যর্থ হবে না এটা সুনিশ্চিত।