হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাংলা সাহিত্যিক। জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত নেত্রকোণা মহুকুমার কেন্দুয়ার কুতুবপুরে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তাকে শ্রেষ্ট লেখক হিসাবে মানা হয়। তিনি লেখালেখির পাশাপাশি চলচিত্রকার, নাট্যকার এবং গীতিকার হিসাবেও বেশ সুনাম অর্জন করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক। আর বেশ কিছু গ্রন্থ বিভিন্ন বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর লেখা বাংলা সাহিত্যে সংলাপ রচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে আর এই অনবদ্য কাজের জন্য তাকে গল্পের জাদুকর বলে অভিহিত করা হয়। অত্যন্ত সফল এই লেখক ১৯ জুলাই ২০১২ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
চলুন জেনে নেই জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের সেরা দশ বই সম্পর্কে।
১। দেবীঃ হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় চরিত্র মিসির আলী সিরিজের প্রথম উপন্যাস হচ্ছে “দেবী”। উপন্যাসটি ১৯৮৫ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। রানু নামের এক নববিবাহিতার অলৌকিক ক্ষমতা, মানসিক সমস্যা আর সেই সমস্যার সমাধানে মিসির আলীর ভূমিকা ইত্যাদি অত্যন্ত সাবলীলভাবে উঠে এসেছে এই উপন্যাসে। অসাধারণ লেখার ধরন আর জীবন কেন্দ্রীক রহস্যময়তা শিহরণ জাগিয়ে রাখে প্রতিটি পৃষ্ঠায়।
২। দিঘীর জলে কার ছায়া গোঃ এটি একটি রোমান্টিক ঊপন্যাস যা ২০০৯ সালে অমর একুশে বই মেলায় প্রথম প্রকাশিত হয়। দুটি ভিন্নধর্মী চরিত্র মুহিব ও লীলার ভালবাসার উপাখ্যান কলমের সাহায্যে হুমায়ূন আহমেদ চিত্রায়িত করেছেন সরলভাবে।যা আপনাকে তুমুল আকর্ষনে আবার বইটি পড়তে বাধ্য করবে।
৩। কে কথা কয়ঃ প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে। এক ছোট্ট বালক গল্প আর মধ্যবিত্ত জীবনের টানাপোড়েন সমৃদ্ধ করেছে এই উপন্যাসকে।
৪। আঙ্গুল কাটা জগলুঃ আঙ্গুল কাটা জগলু হুমায়ূন আহমেদের আরেক অমর সৃষ্টি হিমু সিরিজের সফল উপন্যাস। ২০০৫ সালে প্রকাশিত এ উপন্যাসে হিমুর আন্টি-লজিক্যাল বিষয়গুলো রহস্যময়তায় তুলে এনেছেন চোখের সামনে। মৌলিক লেখার ধরন উপন্যাসকে অন্য লেখা থেকে আলাদা করেছে।
৫। জোছনা ও জননীর গল্পঃ ২০০৪ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রথম প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এই উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য। লেখকের নিজ জীবন এবং ঘনিষ্ঠ জনদের বাস্তব অভিজ্ঞতা তিনি কলমের খোঁচায় ধরে রেখেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এবং তৎকালীন উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কিছু ঘটনা লেখক তাঁর নিজস্ব স্বকীয়তায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
৬। আজ হিমুর বিয়েঃ রহস্যময় চরিত্র হিমু যুবক কিন্তু সে কি আমাদের মত বিয়ে কিংবা সামাজিক সম্পর্কগুলো মূল্যায়ন করে? আর এক্ষেত্রে হিমুর দর্শন কি? তেমনি কিছু প্রশ্নের উত্তর আছে এ বইটিতে যা ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয়।
৭। ময়ূরাক্ষী – এটি ১৯৯০ সালে লেখা হিমু সিরিজের প্রথম বই। জনপ্রিয় চরিত্র হিমু সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য মিলবে এ বই থেকে।
৮। রোদনভরা এ বসন্তঃ রোদনভরা এ বসন্ত এক আশ্চর্য উপন্যাস। শুরুতে ট্রাজেডির দিকে মোড় নেয়া এ উপন্যাসকে লেখক বেশ নাটকীয়তায় অদ্ভুত রোমান্টিকতায় পরিপূর্ন করে দিয়েছেন। আর চরিত্র গুলোকে তাঁর ধারাবাহিক গণ্ডির বাইরে নিয়ে এসেছেন।
৯। আমিই মিসির আলীঃ হুমায়ূন আহমেদ এ উপন্যাসে আবারো মিসির আলীকে তুলে এনেছেন স্বরুপে। এই অসাধারণ বইটি পড়লে আপনার মনে অন্তত একটা প্রশ্ন জাগবে – আচ্ছা, হুমায়ূন আহমেদই কি মিসির আলি?!!!
১০। মধ্যাহ্নঃ মধ্যাহ্ন দুই খন্ডের ঊপন্যাস, এর প্রথম খণ্ড ২০০৬-এ এবং ২য় খণ্ড ২০০৭-এ প্রকাশিত হয়। ১৯০৫ সালের গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে এ উপন্যাস চিত্রায়িত হয়েছে। মধ্যাহ্ন উপন্যাসের গল্পের ধরন এবং বর্ননা এ উপন্যাসকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।