সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখার কলাকৌশলঃ যে সব বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে

শুরুতেই বলে নেই এই লেখাটি মূলত বিভিন্ন ব্লগে সিনেমা স্ক্রিপ্ট বিষয়ক লেখার ছোট সংকলন। এক্ষেত্রে অনেকের লেখার সাহায্য নিতে হয়েছে যা আপনারা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা রাখি।

সিনেমা স্ক্রিপ্ট লেখার জন্য শুধু ফরমেশন জানলেই হয় না সাথে দরকার মৌলিকতা! স্ক্রিপ্ট লেখার আগে আপনাকে প্রথমেই বুঝতে হবে আপনার গল্পটা কতটা অ্যাট্রাক্টিভ। কপি-পেস্ট গল্প নিয়ে কাজ করলে দর্শক আপনার কাজ নিশ্চিতভাবেই ছুড়ে ফেলে দিবে। এক্ষেত্রে আপনি গল্প অ্যাডাপ্ট করতে পারেন। যেমন, একটা রাশিয়ান গল্প পড়ে আপনি সেই গল্পটিকে নিজের সমাজ ও দেশের আঙ্গিকে নতুন রুপ দিতে পারেন তবে পুরোটাই যদি কপি পেস্ট এর মতো হয়ে যায় তাহলে সরাসরি বলে দিন যে বিদেশী গল্পের ছায়াবলম্বনে। দেখুন গল্পের টুইস্টকে পরিবর্তন করা যায় কিনা কিংবা চরিত্রগুলোকে আরো ঝাঁঝালো করা যায় কিনা, দুর্বল চরিত্র কাহিনীর প্রয়োজনে বাদ দেয়ার চেষ্টা করুন।

আসুন দেখে নেয়া যাক একটা ভালো স্ক্রিপ্ট লেখার জন্য কোন কোন বিষয়ের উপর নজর দিলে স্কিপ্ট সার্থক হয়ে উঠে।

গল্প কেমন হবেঃ

একটা স্কিপ্টের মূল ভিত্তি হচ্ছে আইডিয়া বা গল্প। আপনার গল্পের ধারণা নিজের কাছে পরিষ্কার করুন। গল্পকে সাধামাটা করার চেয়ে টুইস্টের দিকে নজর দিন। কাহিনীকে প্রানবন্ত করার চেষ্টা করুন। গল্পকে একঘেয়ে করে ফেলবেন না, গল্পের মুল থিম অনুযায়ী গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যান। একই গল্পে আনন্দ, হাসি, কান্না, বিনোদন ইত্যাদি সব উপাদান রাখতে হবে এমন কোন কথা নেই তাই ফোকাস করুন আপনি কি বলতে চান।

স্ক্রিপ্ট ডেভেলপঃ

স্ক্রিপ্টকে কয়েক অংশে ভাগ করে করুন প্রথমেই আইডিয়া দাড় করান তারপর আইডিয়া অনুযায়ী সিক্যুয়েন্স সাজান। গল্প কিভাবে এগুবে সেটা পর্যায়ক্রমে এক লাইন দুই লাইন করে লিখে স্ক্রিপ্ট এর প্রাথমিক কাজ শেষ করুন। সবমিলিয়ে যদি আপনার সিক্যুয়েন্স দাঁড়ায় ৫০টি তবে এই ৫০টি সিক্যুয়েন্সের প্রতিটিতে এক-দুই লাইন লিখে গ্রাফ তৈরি করুন।

প্রতিটি সিক্যুয়েন্স নিয়ে ভাবুন, সিক্যুয়েন্স টু সিক্যুয়েন্স সঠিক ভাবে যাচ্ছে কিনা। প্রতিটি সিক্যুয়েন্সের লোকেশন কেমন হবে এবং ক্যারেক্টার কে কে থাকবে ইত্যাদি টুকে রাখুন। এরপর সিক্যুয়েন্সগুলোর বিস্তারিত বর্ননা লিখে ফেলুন।

ক্যারেক্টারগুলোকে জায়গামতো বসিয়ে তাদের ডায়ালগ সেট করুন। ডায়ালগ লেখার পর সেগুলোকে নিজের মুখে উচ্চারন করুন। কাউকে না পেলে নিজেই একের অধিক ক্যারেক্টার এর ডায়ালগ অভিনয় এর মতো করে উচ্চারন করুন। ডায়ালগ যখন আপনার মুখ হয়ে আপনার কানে প্রবেশ করবে তখন দেখবেন কিছুটা পরিবর্তন করতে হতে পারে। ডায়ালগে মেটাফোর ব্যবহার করুন। ডায়ালগ শর্ট কিন্তু অর্থবহ করুন। সব কিছু নিজের চোখের সামনে ভিজ্যুয়ালাইজ করার চেষ্টা করুন।

দর্শকের ইমাজিনেশন নিয়ে খেলুনঃ

আপনার স্ক্রিপ্টে সবসময় আপনি দর্শকদের ইমাজিনেশন নিয়ে খেলবেন কারণ এটাই স্কিপ্টের কাজ। আপনার দর্শকদের সবসময় এমন অবস্থায় রাখার চেষ্টা করুন যেনো তারা বর্তমান সিকোয়েন্স দেখতে দেখতে ভাবতে থাকে – এর পরে কি হবে, এর পরে কি হবে কিন্তু ভেবে কোন কুল কিনারা পাবে না।

রিভাইজ দিনঃ

স্ক্রিপ্ট লেখার সময় যদি কোথাও আটকে যান তবে স্ক্রিপ্টি কয়েকবার রিভাইজ দিন। দেখুন কোথাও কোন ভুল করলেন কিনা অথবা চরিত্রতে অসংগতি ফুটে উঠেছে কিনা। এতেও কাজ না হলে নিজের মনকে হালকা করার জন্য চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করুন। দু এক দিনের ব্রেক নিন তারপর আবার চেষ্টা করুন।

স্ট্র্যাকচার নিয়ে খেলুনঃ

একটা স্ক্রিপ্টের তিনটে অংশ শুরু, মাঝ ও শেষ শুধু কিছু ব্যাতিক্রম বাদে সকল স্ক্রিপ্টের স্ট্র্যাকচার এরকমই। এখন দেখুনতো শেষের অংশ শুরুতে অথবা মাঝের অংশটা শুরুতে নিয়ে এসে স্ক্রিপ্ট কেমন দাঁড়ায়! এরকম অনেক ছবিই আছে আর এতে আপনার গল্পটা আরো ইন্টেরেস্টিং হবে।

ট্রাই করেই করুন না!

দর্শককে অ্যাটাচ করুনঃ

আপনার গল্পের কনসেপ্ট কি খুব বেশী জটিল কিংবা সাধারন দর্শকের বুঝতে সমস্যা হবে না তো? আপনি যদি ভেবে নিয়ে থাকেন আপনার গল্পটা সবার জন্য নয় তবে ভিন্ন কথা। কিন্তু আপনি যদি আপামর দর্শককে টার্গেট করেন তবে গল্পকে সহজ ও সাবলীল কিন্তু ইন্টেরেস্টিং হতে হবে। এমন কমন কিছু নিয়ে আসুন যাতে দর্শক নিজেকে গল্পের সাথে কানেক্ট করতে পারে। দর্শক যেনো ভাবে এটা তার গল্প কিংবা আহা! আমি যদি নায়ক/নায়িকার জায়গায় থাকতাম!

ক্যারেক্টারগুলোকে ডেভেলপ করুনঃ

শুরতেই মুল ক্যারেকক্টারগুলোর স্বভাব -চরিত্র সহ অন্যান্য বিষয়গুলো নির্ধারন করে ফেলুন। স্ক্রিপ্টের অন্ততঃ একটা অংশে গিয়ে যেনো দর্শক প্রোটাগনিস্টকে বুঝতে পারে। আপনার স্ক্রিপ্টে যেনো প্রোটাগনিস্ট নিজে নিজে ডিসিশন নিতে পারে, স্ট্রাগল করে, এবং অ্যাক্টিভ থাকে। প্রোটাগনিস্ট এর উপর যে কোন উপায়ে ইমোশনাল টাচ দিন। মনে রাখবেন, আপনার প্রোটাগনিস্ট আপনার পেইন্টের মুল সাবজেক্ট, এখন আপনি এটার উপর রঙ চড়াবেন। যে কোন রঙ আপনি ব্যাবহার করতে পারেন কিন্তু পরিমিত রঙ মেশাবেন। অধিক রঙের ফলে আপনার প্রোটাগনিস্ট কে দর্শক গ্রহণ করবেনা এটা ধরে নিতে পারেন।

এন্টারটেইনমেন্ট ভ্যালুঃ

পরিমাপ করার চেষ্টা করুন আপনার গল্পের এন্টারটেনমেন্ট ভ্যালু কত টুকু অর্থাৎ দর্শকের কাছে গল্পের আবেদন কেমন হবে। দর্শক কি এই ছবি শেষ পর্যন্ত দেখবে কিংবা স্যাটিস্ফাই হয়ে বলবে অসাম একটা ছবি দেখলাম, আবার বন্ধুদের সাথে দেখবো। আসলে এই ভ্যালুই আপনার পরের গল্পেও দর্শক টেনে আনবে।

লজিক ঠিক রাখুনঃ

বিশ্চিত করুন আপনার ছবির গল্পে এক সিক্যুয়েন্সের সাথে অন্য সিক্যুয়েন্স লজিক্যাললি যুক্ত। খুব সহজ ব্যাপার – আপনি চাইলেন আপনার নায়ক যেন জেল থেকে পালায়। আপনি লিখলেন নায়ক লাথি মেরে সেলের তালা ভেঙ্গে কয়েকজন পুলিশের সাথে ফাইট করে পালিয়ে যাবে। এখন চিন্তা করুন – লাথি মেরে তালা ভাঙ্গা কতখানি লজিক্যাল!

বর্ননা বিস্তারিত লিখুনঃ

আপনার অ্যাকশন লাইন বা বর্ননার প্যারাগুলো এমনভাবে লিখবেন যেন স্ক্রিপ্ট পড়েই পরিচালক বা পাঠক বুঝতে পারে কিভাবে কি ঘটছে। আপনি স্ক্রিপ্ট লিখছেন মানেই হচ্ছে সবাইকে ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মধ্যে নিয়ে যাওয়াই আপনার প্রথম কাজ।

আশা করি আপনি একটা ধারনা পেয়ে গেছেন স্ক্রিপ্ট লেখার সময় কি কি ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে, কিভাবে কাজ শুরু করতে হবে। ভাল স্ক্রিপ্ট লিখতে হলে প্রচুর লিখতে হবে কারণ বলা হয়ে থাকে- রিরাইটে একটা স্ক্রিপ্ট ভাল হয়।

এবার এগিয়ে যান আপনার স্বপ্নের পথে, আপনার স্বপ্নযাত্রা শুভ হোক।

Leave a Comment