দেশে দেশে বৈধ অবৈধ কাজের বৈচিত্রতা

কখনো কি দেখেছেন স্বাভাবিক একজন মানুষ আরো বেশি স্বাভাবিকভাবে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে কিন্তু গায়ে একটা সুতোও নেই! আইন-শৃঙ্খলার মানুষ কেন, চারপাশের আর দশটা মানুষও একবার তাকিয়ে দেখছেনা সেদিকে। কারণ, সেটা বৈধ। ভাবছেন, এমন অদ্ভূত আর আপত্তিকর বিষয়টি কী করে বৈধ হয়? হয়। আর কেবল এই একটি ব্যপারই নয়, পৃথিবী জুড়ে এমন অনেক দেশ আছে যেখানে গেলে পারতপক্ষে অবৈধ বা ঘৃণ্য জিনিসটাও বৈধ হয়ে যায়। তাও আবার আইনের দৃষ্টিতেই। চলুন জেনে আসি দেশে দেশে বৈধ অবৈধ কাজের বৈচিত্রতা সম্পর্কে।

প্রকাশ্যে মাদক নেওয়াঃ
পর্তুগালে সম্প্রতি একটি আইন করা হয়েছে। আর এই আইন অনুযায়ী পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত আবিষ্কার হওয়া যেকোন মাদক নিতে পারবে এখানকার বাসিন্দারা। প্রথমবার তারা যে মাদকটিই নিয়ে থাকুক না কেন, তাদেরকে আটক করা হবেনা। যদিও এই আইনের মাধ্যমে দেশের মাদক সেবনকারীর হার কমিয়ে এনেছে পর্তুগাল অনেকটাই। তবে প্রথমবার মাদকে কোন সমস্যা না থাকায় সব ধরণের মাদক সেবনের জন্যে উন্মুক্তও হয়ে গিয়েছে দেশটি। তাই একজন মানুষ নিজের দেশে অবৈধ বলে ঘোষিত মাদকটিও পর্তুগালে প্রথমবারের জন্যে বৈধভাবে নিতে পারেন।

শিল্পকর্ম চুরি করাঃ
চুরি, সেটা সবসময়েই একটি গর্হিত ও আইনত দন্ডনীয় কাজ। কিন্তু নেদারল্যান্ডে শিল্পকর্ম চুরি করা কোনভাবেই আবৈধ নয়। বরং, আপনি যদি কোনভাবে আপনার কাছে সেই চুরি করা শিল্পকর্ম কিছুদিন রেখে দিতে পারেন তাহলে পাকাপাকিভাবে সেটা আপনার হয়ে যাবে। তখন সেটার বৈধ মালিক হয়ে যাবেন আপনি। তবে শিল্পকর্মটি যদি সরকারের মালিকানাধীন হয় কিংবা অত্যন্ত মূল্যবান হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে একটু বেশিই কষ্ট পোহাতে হবে আপনাকে। প্রায় ৩০ বছর ধরে সেটাকে তখন লুকিয়ে রাখতে হবে আপনার। কোনমতে ৩০টা বছর কাটিয়ে দিতে পারলেই সেটা একেবারের মতন আপনার হবে যাবে। তাও আবার আইনত!

নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ানোঃ
স্পেনের সমুদ্রসৈকতগুলোতে যাওয়ার জন্যে অনেকেই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেন। আর এর কারণ হচ্ছে এই যে, এই স্থানগুলোতে নগ্নভাবে ঘুরে বেড়ানোকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্পেনের সমুদ্রতীরের এই বিষয়টি সবাই জানলেও একটি বিষয় অনেকেই জানেনা যে, কেবল সমুদ্রতীর নয়, স্পেনের আইন অনুযায়ী যেকোন স্থানে নগ্নভাবে ঘুরে বেড়ানোর অধিকার দেওয়া হয়েছে সবাইকে। ১৯৭৮ সালে করা এই আইনটি রদ করার চিন্তা অনেকবার করা হলেও এখনো পর্যন্ত কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে ইচ্ছে হলে স্পেনের রাস্তাতেও নগ্ন হয়ে হাঁটতে পারেন যে কেউ। কারণ সেটা ওখানে বৈধ!

গোমড়ামুখো আইনঃ
এ আইনটি ইতালির মিলান শহরের জন্য। সেখানে গোমড়ামুখো থাকা যাবে না। শহরের বাসিন্দাদের সবসময় হাসিমুখে থাকতে হবে। তবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আর হাসপাতালে রোগী দেখার সময় ছাড় রয়েছে। অন্যসময় গোমড়ামুখে থাকলে রীতিমতো জরিমানা গুনতে হবে!

ইচ্ছে মতো চুল কাটা মানাঃ
হ্যাঁ, উত্তর কোরিয়ায় যার যেমন খুশি চুল কাটবেন সে উপায় নেই৷ স্বৈরশাসক কিম জং উন ক্ষমতায় আসার পর পরই ঠিক করে দিয়েছেন, দেশের সব পুরুষকে বিশেষ ১০টি আর মেয়েদের ১৮টি হেয়ার স্টাইলের মধ্যেই যে কোনো একটি বেছে নিতে হবে৷ আর কিম জং উন যেভাবে চুল কাটান সেভাবে দেশের আর কেউ কাটাতে পারবেন না৷

বায়ু ছাড়া আইনঃ
বায়ু ছাড়ার জন্যও আইন মানতে হবে আপনাকে। আপনি মানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার বাসিন্দা যদি হন। আপনি হয়তো রাস্তায় আছেন, পেটে প্রচণ্ড বাতাসের চাপ। বায়ু ছাড়তে হবে। ঠিক আছে ছাড়ুন তবে তার আগে ঘড়িটা দেখে নিন। কেননা বিকেল ৫টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে এ কর্মটি করা যাবে! কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ৬টা থেকে পাবলিক প্লেসে বায়ু ত্যাগ করা অপরাধ।

টয়লেট আইনঃ
মনে করুন গভীর রাতে টয়লেট চেপেছে। কিচ্ছু করার নেই। ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ সুইজারল্যান্ডে রাত ১০টার পর টয়লেটে ফ্ল্যাশ করা বেআইনি। সরকার একে শব্দ দূষণ বলে গণ্য করে।

আরও পড়ুনঃ পৃথিবীর কিছু রহস্যময় স্থানের গল্প

চুল রাখাঃ
বড় চুল অনেক পুরুষেরই স্টাইল। কোনও পুরুষ বড় চুল রাখলে, ইরানে না-যাওয়াই তাঁর পক্ষে ভালো। ২০১০ সালে ইরান সরকার একটি নির্দেশিকায় জানিয়ে দেয়, কোন পুরুষ বড় চুল রাখতে পারবেন না। এমনকি পুরুষরা কী রকম চুল রাখবেন, তার একটি তালিকাও তৈরি করে দেয় সরকার।

কেচাপ নিষিদ্ধঃ
ফরাসি রান্নার স্বাদ অটুট রাখতে, ফ্রান্সের সরকার সম্প্রতি টমেটো কেচাপের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। ফ্রান্স সরকারের দাবি, ফরাসি রান্না টমেটো কেচাপ দিয়ে খেলে, তার ঐতিহ্যবাহী ফরাসি স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। তাই কোন রেস্তোরাঁয় কেচাপ রাখা যাবে না।

চুইং গাম নিষিদ্ধঃ
চুইং গাম ফুলিয়ে bubble বানিয়ে ফাটানো অনেকের কাছেই বেশ একটা কেরামতির ব্যাপার। কিন্তু সিঙ্গাপুরে ১৯৯২ সাল থেকেই চুইং গামের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা আছে। কারণ ১৯৯২ সালে সরকারি পরিবহনকে বিপাকে ফেলতে দেশের একাংশ বিক্ষোভকারী চুইং গাম চিবিয়ে ট্রেন, বাসের সিটে, দরজায় আটকে রাখতে শুরু করে।

জগিংয়ের উপর নিষেধাজ্ঞাঃ
দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার দেশ বুরুন্ডি। ২০১৪ সালের মার্চে বুরুন্ডিতে জগিংয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সেদেশের সরকার। নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়, ভোর বেলা জগিং করতে বেরুলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। যখন নিষেধাজ্ঞাটি জারি করা হয় তখন বুরুন্ডিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল। সরকারের ধারণা, যুবকরা একসঙ্গে ভোরবেলায় জগিং করলে সরকারবিরোধী অশান্তি হতে পারে।

জিনস নিষিদ্ধঃ
উত্তর কোরিয়ায় নীল রঙের জিনস বন্ধ করে দিয়েছে সেদেশের সরকার। সেদেশের সরকারের বক্তব্য, মার্কিন আগ্রাসনের চিহ্ন ব্লু জিনস।

পর্ণ নিষিদ্ধ নয় কিন্তুঃ
পর্নফিল্মের উপর কোন নিষেধাজ্ঞা নেই অস্ট্রেলিয়ায়। তবে পর্নফিল্মের নায়িকার স্তনদ্বয় যদি ছোট আকারের হয়, তাহলে সেই পর্নভিডিওতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেয় অজি সরকার। দেশটির সরকারের বক্তব্য, যে সব পর্নস্টারের স্তনদ্বয় ছোট, তাঁদের ভিডিও দেখলে দেশে শিশু যৌন নিগ্রহ বাড়তে পারে।

ভেংচিতে আটকঃ
অ্যামেরিকায় ওক্লোহামায় আপনি কুকুরকে ভেংচি কাটতে পারবেন না, ভেংচি কাটলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের হাতে আটক হতে পারেন।

ভিডিও গেমসঃ
চীন সরকার ২০০০ সাল থেকে ভিডিও গেমস-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সরকারের দাবি, এই সব গেম খেললে, ছাত্র-ছাত্রীদের সময় নষ্ট হয়।

Leave a Comment